Tuesday, April 21, 2015

বাংলাদেশমুভস , ১ রজব, ১৪৩৬, ৮ বৈশাখ, ১৪২২, ২১ এপ্রিল, ২০১৫ : যারা সদরঘাটের লাল কুঠি যান, যারা সোয়ারীঘাটে যান- তারা দেখবেন শত শত মানুষ ছোট ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে পার হচ্ছেন। আমি মাঝিদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছি ওই পয়েন্টগুলোতে নদীর প্রশস্থতা মাত্র আধা কিলোমিটার। এই নৌকার হ্যাচাল এবং ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে অনেকেই যা চাইছেন, তা হচ্ছে নদীর মৃত্যু, এই একই কারনে ঢাকার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর মৃত্যু হয়েছে। নদীকে খাস জমি ঘোষণা করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ভূমিহীন মানুষগুলোর অনেকেই রাতারাতি ভিআইপি বনে গেছেন। এভাবে আমরা লাভবান হতে পারিনি, আমরা জানযটে বসে থাকছি, আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছি। কিন্তু বিশ্ব যেভাবে তাদের গতি আবিষ্কার করছে আমরা তার কাছে কোনভাবেই যাচ্ছিনা, তার একটি হচ্ছে টানেল করা। হযরত মুসা (আঃ) কে দিয়েই আল্লাহ একটি টানেলের ধারণা দিয়ে বনী ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল হতে রক্ষা করেছিলেন। লোহিত সাগরের পানির বক্ষেই যে ঘৌড় সওয়ার হতে পারে, সেটি কয়েক হাজার বছর আগে আল্লাহ মুসা (আঃ) কে শিখিয়েছিলেন, যেমন আল্লাহ আদম (আঃ) কে চাকা, নুহ (আঃ) কে নৌকা, সুলায়মান (আঃ) কে বিমান এবং রাসুল মুহাম্মদ (সাঃ) কে শিখিয়েছিলেন আলোর বাহনে করে আরশে আজিমে যাবার কৌশল। আমরা বাংলাদেশের উন্নতির দিকে খেয়াল করলে দেখবো – নদী হচ্ছে এই জনপদের স্রষ্টা। মাউন্ট এভারেস্ট থেকে পানির সাথে বয়ে আসা নুড়ি আর পাথরের ফলেই এই বৃহৎ ব-দ্বীপের সৃষ্টি। কিন্তু এদেশেই জন্ম নেওয়া অবিমৃশ্যকারীদের অপতৎপরতায় নদের বহুমুখী সুবিধা গ্রহণ করছি না। নদীভাঙ্গন জেলার মানুষগুলোকে এনে মিরপুর সাত, মুহাম্মদপুর, সূত্রপুর, কড়াইল, কালসীর মত জায়গাগুলোকে ভরাট করে ফেলছি। অধিকন্তু টানেল না করে অত্যধিক পিয়ের তৈরী করায় নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে, নদী মৃত্যুবরণ করছে, যমুনা ব্রিজের নিচে তা ঘটেছে, নির্মিতব্য পদ্মা সেতু নিচের তা ঘটতে বাধ্য। আঠা কিলোমিটার বা পাঁচ- ছয় কিলোমিটারের প্রস্থের একটি নদীকে যুক্ত করতে যেখানে মাত্র একটি বা দুটি ব্রিজ করা লাগে, সেখানে টানেলিং এর মাধ্যমে নদী শাসনের বাড়তি ঝুঁকি আর খরচ না করেই একাধিক পয়েন্টে টানেল করা যায়। আজকে যে পয়েন্টে পদ্মা সেতু করা হচ্ছে তার উত্তরে নদীর প্রশস্থতা কম ফলে আমরা আমাদের কাঙ্খিত রেল এবং সড়ক যোগাযোগ কাঠামো গড়ে তুলতে পারতাম টানেলের মাধ্যমে। কিন্তু বৃটিশ-ভারতের সেই পুরানো প্লান মত ৫৪ নদীতে যেমন বাঁধ দিয়ে নদীকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী করা হয়েছে, তেমনি তাদেরই পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪১ পিয়েরের পদ্মা সেতু করা হচ্ছে। এটি এক সময়ে আমাদের আফসোসের কারন হবে। দেশে প্রায় ৪৫০ নদী আছে, অজস্র খাল আছে। এই পনি পথের দু’ধারের লোকগুলোর পায়ে হাঁটা পথ তৈরীর জন্য টানেল করা খুবই সহজ একটি কাজ।
আমার মনে আছে খুলনা শহরের সদর হাসপাতাল পয়েন্টে স্যানের হাট নামক পূর্বের এলাকার লোকদের জীবিকার উৎস্য খূলনা শহর আর তাই তারা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুকি নিয়ে স্রোতবহুল নদী পার করতো, যা এখনও করে শুনেছি। রূপসা বিজ্র করা হলেও তা অনেক দূরে। কিন্তু এই রকম কয়েকটি পয়েন্টে টানেল অনায়াসে করা যায়। কিন্তু সেটি না হবার কারনে মানুষ জীবন জীবিকার কারণে রূপসা নদীর মৃত্যু কামনা করছে। অধিকন্তু তারা ফারাক্কার মৃত্যুফাঁদকেও সঙ্গত কারণে তারা স্বাগত জানাবে। একটি দেশের দূরদর্শী নেতৃত্ব তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জনমানসের প্রশান্তি প্রযুক্তি দিয়ে সমাধা করে, যা আমাদের মধ্যে নেই। বিদেশীদের সুদের টাকা থেকে ছ্যাপ দিয়ে টাকা গুনে এই টাকাই তারা তথাকথিত উন্নত দেশে পাচার করছে। কি দুর্ভাগ্য আমাদের !
আজকে টানেল করে ঢাকার দুয়ারী পাড়া হতে তুরাগ নদীর তল দিয়ে সাভারে অনায়াসে রোড করা যেত। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন কীভাবে নদীকে ফকিরাপুলের খাল করা হচ্ছে, উত্তরার কামারপাড়ায় যান, সেক্টর ১২ নং ইস্তেমার মাঠের কাছে বিশ^বিদ্যালয় আর ব্যারিস্টার সাহেবে ক্যানসার হাসপাতালে যান -দেখবেন তাই যা আমি বলছি। এমন অজস্র উদাহরণ চোখে পড়বে সেখানে। ঢাকার পূর্ব পশ্চিম যোগাযোগ বিঘিœত। কিন্তু টানেল দিয়ে আমরা পূর্ব পশ্চিম যোগাযোগ সুরক্ষিত রাখতে পারে। বিজয় সরণী, ফার্মগেট, পান্থপথ, বাংলামটর এবং শাহবাগ পূর্ভ পশ্চিম যোগযোগ টানেলের মাধ্যমে করা গেলে নজরুল ইসলাম সরনী ফ্রি ওয়ে হতে বাঁধা কোথায়? এভাবে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে টানেলের মাধ্যমে আমরা আন্ত জেলা যোগাযোগ কাঠামো গড়ে তুলতে পারি।
সম্প্রতি আমি টিবিএম সম্পর্কে ধারণা নেই। টিবিএম মানে টানেল বোরিং মেশিন। ইউরোপ আমেরিকা, চীন জাপানে টানেল বোরিং করে তারা টিউব ট্রেন চালাচ্ছে । এমন মেশিন আমরা তাদেরখে ক্রয় করতে পারি, অথবা তাদের থেকে পেটেন্ট নিয়ে আমাদের শিপ ইয়ার্ড বুয়েট সহ প্রকৌশল বিদ্যায় পারদর্শী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করে এমন টিবিএম তৈরী করতে পারে। আমাদের মাটি নরম মাটি, ফলে এটি খনন করা খুবই সহজ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় টিউচ ট্রেনের একটি প্রকল্পের কথা শুনেছিলাম, কিন্তু দেশে মাফিয়া চক্রের অভাবে নেই, সে প্রকল্প যে কোথায় গেল, তা আর বলতে পারছি না । তবে জালেমের জুলমতি যাই থাক, আমরা আমাদের আকল খাটাতে পারি এবং সরকারকে বলতে পারি। আর যেটি করতে পারি সেটি হচ্ছে সেই ধরণের সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে পারি যারা লাগসই উন্নয়ন করতে পারে, জনগনের সর্বোচ্চ কল্যান নিশ্চিত করতে পারে। কিছু না করতে পারলে বসে এমন লেখা লিখতে পারি, অত্যন্ত যে কাজটি করা উচিত নয়, তা হচ্ছে জেনে বুঝে লুটেরাদের দেশ ধ্বংসের কাজের স্তুতি করে দালালী করা। এছাড়া আমরা আল্লাহর কাছে নিজেদের কল্যানের জন্য দোয়া করতে পারি। শব্দ: ৭৪৩ (মুহাম্মদ শামীম আখতার)

No comments:

Post a Comment